ওমিক্রন সংক্রমণ থেকে কেন বাঁচতে হবে?

Omicron (B.1.1.529): SARS-CoV-2 Variant of corona from South Africa.

A computer generated image of the coronavirus omicron variant. Source: Getty, Moment RF

বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের তুলনায় ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের তীব্রতা কম। আরও বলা হচ্ছে যে, কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি আগের চেয়ে এখন কম। তবে, এর মানে কি এটাই যে, আমরা সংক্রমিত হলাম কি হলাম না, সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত্থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে সব ধরনের সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।


করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভেরিয়েন্টটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। তবে, এর লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম বলে বলা হচ্ছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের চিফ মেডিকেল অফিসার কেরি চ্যান্ট বলেন, তার স্টেটে এখন বহু লোক আক্রান্ত হয়েছে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রবার্ট বয় এসবিএস নিউজকে বলেন, জনবহুল স্টেটগুলোতে ওমিক্রন প্রাদূর্ভাব আরও বিস্তৃত হবে। এরপর, আগামী মাসে এর প্রকোপ কমতে দেখা যাবে।

তাই, ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্ব কতোটুকু? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি এখনও অসুস্থ হতে পারেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফসি বলেন, যারা টিকা নেন নি তারা অনেক বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে থাকেন, হাসপাতালে ভর্তি, ইনটেনসিভ কেয়ার এবং এমনকি মৃত্যুর ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয়ত, এমনকি আপনার যদি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কোনো ঝুঁকি না-ও থাকে, তারপরও, যাদের এ রকম গুরুতর স্বাস্থ্য-ঝুঁকি রয়েছে, তারা আপনার দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের তীব্রতা কম হলেও, এটি একটি বিপদজনক ভাইরাস।

ওমিক্রন থেকে বেঁচে থাকার আরও একটি কারণ হলো, এর দীর্ঘ-মেয়াদী কুপ্রভাব এখনও অজানা।

করোনাভাইরাসের আগের ভেরিয়েন্টগুলোর দ্বারা কখনও কখনও এ রকম লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যেত, যেটাকে লং কোভিড বলা হয়ে থাকে।

নিউ ইয়র্কের কার্ডিওভাসকুলার ও পালমোনারি থেরাপি বিশেষজ্ঞ ড. নোয়াহ গ্রিন্সপ্যান বলেন, লং কোভিডের বিষয়টি বাস্তব।

আগের ভেরিয়েন্টগুলোতে যেখানে ‘সাইলেন্ট’ বা নীরব কুপ্রভাব দেখা গেছে, ওমিক্রন ভেরিয়েন্টেরও সে রকম কুপ্রভাব আছে কিনা তা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। সেসব নীরব কুপ্রভাবগুলো হচ্ছে, সেল্ফ-অ্যাটাকিং এন্টিবডিজ, শুক্রাণু বৈকল্য এবং ইনসুলিন উৎপন্নকারী কোষগুলোর পরিবর্তন।

ড. গ্রিন্সপ্যান বলেন, এই ভাইরাসটির কুফল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সামান্য, একদম ভাসা ভাসা।

ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য যে-সব ওষুধের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর অভাব রয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাবের বিগত তরঙ্গগুলোতে ব্যবহৃত তিনটি এন্টিবডি ড্রাগের মধ্যে দু’টিই এখন ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করছে না।
আর, গ্লাক্সোস্মিথক্লিন-এর সট্রভিমব নামের তৃতীয় ড্রাগটির সরবরাহ অনেক কম।

ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ফাইজারের প্যাক্সলোভিড নামের একটি নতুন ওরাল এন্টিভাইরাল ট্রিটমেন্ট। তবে, এর সরবরাহ সীমিত। আর, এটি পুরোপুরি কার্যকর করার জন্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এটি গ্রহণ করতে হয়।

এর মানে হলো, আপনি অসুস্থ হলেও এই চিকিৎসা-সুবিধা না-ও পেতে পারেন।

কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতালগুলোতেও চাপ বাড়ছে।

কুইন্সল্যান্ডের চিফ হেলথ অফিসার ড. জন জেরাড বলেন, তার স্টেটে হাসপাতাল ব্যবস্থা এখন ব্রেকিং পয়েন্টে পৌঁছে গেছে এবং কয়েক সপ্তাহের মাঝে তারা বড় ধরনের জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে পারেন।

তার ধারণা, কোভিড-সংক্রমণের একটি নতুন তরঙ্গ আঘাত হানবে এবং বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রনে আক্রান্তদের দ্বারা হাসপাতালগুলো সয়লাব হয়ে যাচ্ছে এবং কর্মী-সঙ্কটের কারণে সমস্যা আরও গুরুতর রূপ নিচ্ছে।

ওহিওর নার্স জোডি পারসন্স বলেন, নার্স হওয়ার পরে এ রকম অবস্থা তিনি এর আগে কখনও দেখেন নি।

সেখানে অধিক সংক্রমণের পাশাপাশি নতুন ভেরিয়েন্টের প্রাদূর্ভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। আসল ভাইরাসটির নাম SARS-COV-2। ওমিক্রন এর পঞ্চম ভেরিয়েন্ট। ভাইরাসটির ধরন পাল্টানোর সক্ষমতা কমে গেলে এই ধরনটি বজায় থাকবে।

এই ধরনটি প্রথম সনাক্ত করা হয় সাউথ আফ্রিকার গটেঙ প্রদেশে। ওমিক্রন ভেরিয়েন্টটি সেখানে কম-বয়সীদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ-হারের কারণে এটি মিউটেন্ট বা রূপান্তরিত হওয়ার বেশি সুযোগ পায়।

সাউথ আফ্রিকার কোভিড-১৯ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাডভাইজোরি কমিটির সাবেক প্রধান, প্রফেসর সেলিম আব্দুল করীম গত নভেম্বরে বলেন, তারা ভাগ্যবান যে, এটা দ্রুত সনাক্ত করতে পেরেছেন।

করোনাভাইরাসের কোনো নতুন রূপান্তরিত ধরন তার আগের ধরনটির চেয়ে আরও কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে, এ রকম কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী নিয়ে বর্তমানে যেসব স্বাস্থ্য-সেবা  সহায়তা পাওয়া যায়, সে-সব সম্পর্কে আপনার ভাষায় জানতে ভিজিট করুন 

পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .


এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share