টেলিভিশন থেকে ল্যাপটপ-মোবাইল, বুধ সন্ধ্যায় ভারত চোখ রেখেছে চন্দ্রাভিযানে। ভারতীয় সময় বিকাল ৫টা থেকেই উৎকণ্ঠার প্রহর গোনা শুরু, চন্দ্রযান-২-এর পুনরাবৃত্তি হবে না তো চন্দ্রযান-৩-এ!
ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম ছাপ রেখেছে প্রজ্ঞান। তবে অবতরণের শেষ ২০ মিনিট নিয়ে ইসরোর আশঙ্কার অন্ত ছিল না। কিন্তু, সমস্তটাই পরিকল্পনা মাফিক হওয়ায় চাঁদে সফলভাবে সফটল্যান্ডিং করে ল্যান্ডার বিক্রম। এবার আজানা চাঁদের খবর সংগ্রহ করবে রোভার প্রজ্ঞান।
বিক্রমের সফল অবতরণের পর এক্স বার্তায় ইসরো জানিয়েছে, ভারত, চন্দ্রযান সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই দক্ষিণ ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে রওনা দিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটারের যাত্রাপথে প্রতিটি ধাপ সফলভাবে পেরিয়েছে চন্দ্রযান-৩। ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছায় চন্দ্রযান-৩। ১৯ আগস্ট মূল যান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের দিকে রওনা দেয় ল্যান্ডার বিক্রম। তারপর ধীরে ধীরে চাঁদের কাছে পৌঁছায় বিক্রম। অবশেষে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন পূরণ করছে চন্দ্রযান-৩।
বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সময়, ঘড়ির কাঁটায় ৬ টা ৪ হতেই চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। আর সেই সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ইসরোর বিজ্ঞানী থেকে আপামর জনগণ।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয় করেছে ভারত। চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যের পর এখন সারা দেশে উৎসবের মেজাজ। আতশবাজি পুড়িয়ে ভারতের সাফল্য উদযাপন করেছেন সাধারণ মানুষ। আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযানের নেপথ্যে প্রোজেক্ট ডিরেক্টর পি ভিরামুথুভেল, সহকারী পরিচালক কল্পনা, মিশন ডিরেক্টর শ্রীকান্ত এবং ইউআরএসসি ডিরেক্টর ভি শঙ্করনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরো প্রধান এস সোমনাথ। তার আগে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ মিশনের সহকারী পরিচালক কল্পনা বলেছেন, এটি সবচেয়ে স্মরণীয় এবং আনন্দের মুহূর্ত। এর আগে চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতার পর ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। অনেক কথাও শুনতে হয়েছিল। অবশেষে সাফল্য এসেছে।
চন্দ্রযান-৩ এর এই সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। পাশাপাশি ভারতের ঐতিহাসিক সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার-সহ বলিউড অভিনেতারা।
এদিকে, চাঁদের মাটিতে নামল ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও অনাবিষ্কৃত। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে পৌঁছুতে পারে নি। সেখানেই পৌঁছে গিয়েছে ভারত। চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। তৈরি হয়েছে ইতিহাস। চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসাবে নাম লেখাল ভারত। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের পরেই। আর, চাঁদের দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের কৃতিত্বও পেল ইসরো।
এর মধ্যেই চাঁদের ‘ট্যুর’, অর্থাৎ, পর্যটনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের জন্য বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস আগামী প্রজন্ম চাঁদে পর্যটনের স্বপ্ন দেখবে। দূরের চাঁদমামা ট্যুরে’র চাঁদমামা হবে। ঠিক শেষ এক কিলোমিটারে ইসরোর সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী এবং ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, আমরা, ভারতে পৃথিবীকে মা বলি, আর চাঁদকে বলি মামা। ভারতের শিশুদের, মায়েরা এত দিন বলে এসেছেন, চন্দামামা দূর কি হ্যায়। আমার বিশ্বাস খুব শিগগিরই ভারতের আগামী প্রজন্মের শিশুরা বলবে চন্দামামা ট্যুর কি হ্যায়; অর্থাৎ, চাঁদমামা বেড়ানোর জায়গা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, ইসরোর আগামী মহাকাশ অভিযানের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এরপর আদিত্য এল ওয়ান মিশন লঞ্চ করবে ইসরো। পরবর্তী লক্ষে শুক্রগ্রহও রয়েছে। আর আছে গগনযান; যার মাধ্যমে ভারত প্রথমবার মহাকাশে অভিযাত্রী পাঠাবে। চন্দ্রযানের এই সাফল্যই ভারতকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অন্যদিকে, দেশকে গর্বিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যে এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাই পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখেছিল। চাঁদে গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটা হল ভারতের উদীয়মান ভাগ্যের উদয়। সাফল্যের অমৃত বর্ষ। বিজ্ঞানীদের পরিশ্রম আর প্রতিভার কারণে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছে। যেখানে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও দেশ পৌঁছাতে পারে নি। ভারতের ঘরে ঘরে এখন উৎসব হচ্ছে। তিনিও মনে মনে সেই উৎসবে দেশবাসীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা ঠিকই বলেছেন, ইন্ডিয়া ইজ নাউ অন দ্য মুন।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, এই জয় শুধু ভারতের নয়। ভারত এক বিশ্বে বিশ্বাস করে। এক মানবজাতির সাফল্যে বিশ্বাস করে। ভারতের চন্দ্র অভিযানেও রয়েছে সেই একই মানবতার লক্ষ্য। তাই, এই সাফল্য সমগ্র মানবজাতির জয়। ভারতের এই সাফল্য অন্য দেশের চন্দ্রাভিযানেও ভবিষ্যতে সাহায্য করবে।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।