পেরিনেটাল মানসিক জটিলতা শুধু সন্তানের মায়েদেরকে আক্রান্ত করেনা, পিতাদেরও করে।
মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন মানসিক জটিলতা বিষয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন অপধারণা আছে, বিশেষ করে আদিবাসী ও অভিবাসী সমাজে।
এই স্টিগমা অর্থাৎ কুসংস্কার ও অপধারণার কারণে অনেক পরিবার সমস্যা গোপন রাখেন। তাই পেরিনেটাল মেন্টাল হেলথ উইকে নবজাতক প্রত্যাশীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই আয়োজক সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
প্রতিকী ছবি: অস্ট্রেলিয়ার একজন আদিবাসী সন্তানসম্ভবা নারী Source: Getty Images
অস্ট্রেলিয়ার আসিবাসীর রীতি অনুযায়ী তিনি তার কন্যা সন্তান লিলির জন্মদানের পর নাড়ী মাটিতে পুঁতে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা তাকে সেটা করতে দেননি। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
লিলির জন্মের ছয়মাস পর তার মধ্যে মাতৃত্বকালীন বিষন্নতা এবং উদ্বেগ অর্থাৎ৷ 'পোস্ট-নেটাল এংজাইটি এন্ড ডিপ্রেশন'
ধরা পড়ে। তারপর তিনি চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন। 'থেরাপি' এবং ওষুধ গ্রহনের পর তিনি এখন ভাল আছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতি পাঁচজন মায়ের একজন এবং দশজন পিতার একজন পেরিন্যাটাল ডিপ্রেশন এন্ড এংজাইটিতে ভোগেন।
করোণাভাইরাস অতিমারীর সময়কালে এই মানসিক সমস্যার মোকাবিলায় অনেক সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
অতিমারীর গত দুই বছর এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই কঠিন সময় পার করেছেন বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী ক্রিস বার্নেস। তিনি গিজেট ফাউন্ডেশন অস্ট্রেলিয়ার একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। অতিমারীর সময়কালে তাদের সেবার চাহিদা ১২৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল এবং LGBTQIA পরিবারের মধ্যে এই পেরিনেটাল সমস্যা আরও প্রকট।
চলমান পেরিনেটাল মানসিক স্বাস্থ্য সপ্তাহে এই সংকট সমাধানে তাই ৪০টিরও অধিক সংগঠন একত্রিত হয়েছে যাতে এই বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে উঠে।
সন্তান প্রত্যাশী পিতামাতার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সাহায্য দিতে মিস বার্নেসরা কাজ করে চলেছেন।নামিতা মহানামা পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট এবং দুই সন্তানের জননী। তিনি দুই ছেলের জন্মদান কালে মাতৃত্বকালীন বিষন্নতায় ভুগেছিলেন।
Namita Mahanama is writing a book about her experience with perinatal mental illness. Source: Supplied/Namita Mahanama
তার পরিবার এইসব বিষয়ে বেশ সচেতন হলেও ভারতীয় অস্ট্রেলিয়ান সমাজে তাকে তার মানসিক সমস্যা নিয়ে বিরুপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
সন্তান প্রত্যাশী এবং নতুন বাবা মায়েদের স্বার্থে তিনি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও অপধারণা ভাঙতে চান নমিতা। তিনি বর্তমানে তার মাতৃত্বকালীন মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি বই লিখছেন।
পাঠকদের কারোর যদি মানসিক সাহায্যের দরকার, বা এই বিষয়ে তথ্য দরকার, তারা লাইফলাইন নাম্বারে ফোন করুন- ১৩ ১১ ১৪ অথবা বিয়ন্ড ব্লুর ১৩০০ ২২ ৪৬৩৬ নাম্বারে।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।