চাকরির আবেদনপত্র সঠিকভাবে তৈরি করার জন্যে কয়েকটি পরামর্শ

Shot of a young businessman going through paperwork while on a call at work

Applying for a job takes time and energy. Credit: Moyo Studio/Getty Images

কোনো চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে পছন্দ হলে, সেখানে আবেদন করাসহ পরবর্তী পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে চাকরির আবেদনপত্র লিখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে, তবে নিয়োগকারীর প্রত্যাশা বুঝে আবেদন করলে তা সেই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।


গুরুত্বপূর্ণ দিক:
  • আপনার রেজুমেই আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং দক্ষতাকে তালিকাভুক্ত করে এবং কর্মক্ষেত্রে আপনার অর্জন তুলে ধরে।
  • চাকরির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সবসময় আপনার জীবনবৃত্তান্ত ও আবেদনপত্র হালনাগাদ করুন।
  • আবেদনপত্র এবং চাকরির সাক্ষাৎকারে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিয়োগকর্তাদের জানানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
চাকরির জন্যে সঠিকভাবে আবেদন করতে সময় এবং ধৈর্য্য লাগে, বিশেষত কেউ যখন অস্ট্রেলিয়ায় নতুন করে চাকরিজীবন শুরু করছেন।

বেশিরভাগ নিয়োগকর্তাই আবেদনকারীর আগের কাজের ইতিহাস এবং দক্ষতার লিখিত প্রমাণ দেখতে চায়। সেই প্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই অনেকে চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্যে আমন্ত্রণ জানায়।

জবস্পিক একাডেমির নাটালি পার্ট অস্ট্রেলিয়ায় কর্মজীবন গড়ে তোলার কাজে আন্তর্জাতিক পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

তিনি বলেন,
প্রত্যেকেরই একটা কৌশল বা পরিকল্পনা থাকা দরকার।

চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজার সময় সেখানে বিশেষ কোনো চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ রয়েছে কিনা তা ভাল করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন এএমইএস (AMES) অস্ট্রেলিয়ার সার্ভিস ডেলিভারি ম্যানেজার ম্যান্ডি র‍্যাটক্লিফ।

তারপরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চাকরির বিজ্ঞাপনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে ফেলা।

নিয়োগকর্তারা চাকরির ভূমিকা নিয়ে কী বলছেন? তাদের চাহিদামতন প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি কি আপনার আছে?

নাটালি পার্ট এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

নিয়োগকর্তারা সাধারণত প্রত্যাশা করেন যে আবেদনকারী তার অভিজ্ঞতা লিখিত আকারে পরিবেশন করবে। আবেদনকারীর সম্পর্কে জানার দ্রুততম উপায় হলো তার জমা দেয়া কারিকুলাম ভিটা বা জীবনবৃত্তান্ত পড়া।
Australia Explained - Job Applications
The quickest way an employer can learn about you is by reading your curriculum vitae (cv) or resume. Source: Moment RF / Narisara Nami/Getty Images
রেজুমেই বা জীবনবৃত্তান্তে দুই বা তিন পৃষ্ঠার মধ্যে আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং দক্ষতার তালিকা দেয়া থাকে। আর এর মাধ্যমেই কর্মজীবনে নিজের অর্জনগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা যায়।

পিপল অ্যান্ড কালচার বিভাগে কর্মরত রবি মোরম্যানের মতে, জীবনবৃত্তান্ত তৈরির জন্যে কোনও সুনির্দিষ্ট বা কঠোর নিয়ম নেই। অনেক ক্ষেত্রেই একের বদলে বেশ কয়েকটি সংস্করণ তৈরি করা বরং বুদ্ধিমানের কাজ।

চাকরির বিজ্ঞাপনে যে-ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়, আবেদনে সেরকম ভাষা ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি কাজের বিবরণের মধ্যে পাওয়া কীওয়ার্ড, ফ্রেজ বা বাক্যাংশ এবং বিভিন্ন ধরনের রেফারেন্স হতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে যে এমন কিছু ব্যাপার রয়েছে যা রেজুমেইতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।

প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর বয়স, ধর্ম, শারীরিক ক্ষমতা বা লিঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা বেআইনি।

রেজুমেই তৈরির জন্যে অনলাইনে প্রচুর সাহায্য পাওয়া যায়, অনেক টেমপ্লেটও রয়েছে যেগুলো একাজে ব্যবহার করা যায় এবং অভিবাসী সহায়তা পরিষেবা যেমন এএমইএস অস্ট্রেলিয়া এবং মাইগ্রেন্ট রিসোর্স সেন্টারও জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

নিয়োগকর্তারাও অনেক সময় এক পৃষ্ঠার একটি 'কভার লেটার'-এর জন্য অনুরোধ করেন। এই কভার লেটারটি একটি সুবর্ণ সুযোগ ব্যাখ্যা করার যে কী আপনাকে এই চাকরির জন্যে আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং কেন আপনি এই পদের জন্য উপযুক্ত তা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করার।

প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে নিয়োগকারীরা প্রচুর পরিমাণে কভার লেটার পেয়ে থাকেন, তাই এর মাধ্যমে তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা জরুরি বলে জানিয়েছেন রবি মোরম্যান।
Australia Explained - Job Applications
Employers also typically request a one-page letter – or cover letter. Here’s your opportunity to explain what motivated you to apply and why you’re a good fit for the position. Credit: Willie B. Thomas/Getty Images
অনেক ক্ষেত্রে আবেদনের সময় ‘সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া’ নামক কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যে আহ্বান করা হয়। প্রার্থী নির্বাচনে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে চাকরির জন্যে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের খাতিরে আপনার দক্ষতা, গুণাবলী এবং অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত লিখিত উদাহরণ সরবরাহ করতে পারেন।

‘সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া’-র উত্তর লেখার সময় পুনরাবৃত্তি এড়াতে আপনার কভার লেটারটি সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে। তবে যে কোনও পদের জন্য যোগ্যতর প্রতিযোগী হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সবগুলি প্রশ্নের উত্তর করা আবশ্যক।

আর সবশেষে পুরোটা লেখা হয়ে যাওয়ার পরে আপনার আবেদনটি সাবধানতার সাথে আরেকবার দেখে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন ম্যান্ডি র‍্যাটক্লিফ।

আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া দরকার, তাই শুরুতেই আবেদনের সময়সীমা দেখে নেওয়া জরুরি।
Australia Explained - Job Applications
You may practice answering questions with a friend to best prepare for a job interview. Credit: fotostorm/Getty Images
প্রতিটি আবেদনপত্রই গুরুত্বসহ পর্যালোচনা করে শুধুমাত্র সবচেয়ে উপযুক্ত আবেদনকারীদের নিয়োগকর্তার সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, আর পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ সাক্ষাৎকারে সাফল্যের জন্যে প্রস্তুতিটাই মুখ্য।

নাটালি পার্ট বলেন, সাক্ষাৎকারের আগে আপনাকে আবার চাকরির বিজ্ঞাপনটি পড়ে নিতে হবে, কারণ এতে নিয়োগকারী আপনার কাছ থেকে যে সমস্ত তথ্য চায় সেগুলির উল্লেখ থাকে।

সাক্ষাৎকারের জন্যে আপনি কোনও বন্ধুর সাথে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুশীলন করতে পারেন। যদিও প্রতিটি চাকরির সাক্ষাৎকার আলাদা হয়ে থাকে, তবে অনলাইনে সাধারণত বিভিন্ন চাকরির জন্যে নানারকম প্রশ্নের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

ম্যান্ডি র‍্যাটক্লিফ সাক্ষাৎকারের দিন সঠিক পোশাক পরার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
Portrait of a puzzled man looking at smart phone, sitting at table at home.
A good employer will follow up an interview with a phone call to offer you constructive feedback. Source: iStockphoto / nortonrsx/Getty Images/iStockphoto
মিজ পার্ট আরও বলেন,
অস্ট্রেলিয়ার নিয়োগকারীরা সততার সাথে উত্তর দেয়া পছন্দ করে।

তিনি বলেন, প্রায়শই আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন ও উত্তরগুলি মুখস্থ করার চেষ্টা করতে দেখা যায় যা ঠিক নয়।

সঠিকভাবে আবেদন ও ভালোমতন সাক্ষাৎকার দেয়ার পরে নিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের জন্যে অপেক্ষা করাটা অনেক সময়ই আপনার ধৈর্য্যপরীক্ষা নিতে পারে।

নিয়োগকর্তাদের ইমেলের মাধ্যমে আপনার আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করা এবং পুরো প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে হালনাগাদ তথ্য জানানোটা সাধারণ ভদ্রতা, বলেছেন রবি মোরম্যান।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার লিঙ্কে ক্লিক করুন।

Share