স্কুল ও মসজিদগুলোয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা

Does Australia have a problem with Islamophobia?

Does Australia have a problem with Islamophobia? Source: AAP

অস্ট্রেলিয়ায় এই মুহূর্তে ইহুদি-বিদ্বেষী হামলা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে ইসলামোফোবিয়া সংক্রান্ত ঘটনার পরিমাণ। বেশ কিছু নারী জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন তারা এবং স্কুলে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে।

অস্ট্রেলিয়ান মুসলিমদের ওপর নির্যাতন ও হামলার প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণকারী ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. নোরা আমাথ বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গত এক বছরে ইসলামোফোবিয়ার ঘটনা এর আগের আট বছরের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি।

আর এ ধরনের ঘটনার বিশেষ টার্গেট ছিল নারীরা।
ওয়েস্টার্ন সিডনির শহরতলী সেফটনের বাসিন্দারা গত ১৫ ডিসেম্বর একটি ব্যস্ত রাস্তার আন্ডারপাসে লাগানো ইসলামোফোবিক গ্রাফিতি দেখতে পান।

তাতে ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর কথা লেখা ছিল।

বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতারা সাথে সাথেই এই গ্রাফিতির নিন্দা জানিয়েছেন এবং পুলিশ বলছে যে তারা তদন্ত করছে, তবে ড. আমাথ বলেছেন যে রবিবারের এই গ্রাফিতি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।

২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ঘটা সন্ত্রাসী হামলা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল। সেখানে একজন অস্ট্রেলিয়ান বন্দুকধারী ৫১ জন মুসল্লিকে গুলি করে হত্যা করেছিল।

অনেক মুসলিমকে এই ঘটনার স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছেন দুই সন্তানের মা আয়া, যিনি এক দশকেরও বেশি সময় আগে মিশর থেকে অ্যাডিলেডে চলে এসেছিলেন।

ইসলামোফোবিয়ার উত্থান সেই স্মৃতিগুলিকে আবারও ফিরিয়ে আনছে - এবং এসব ঘটনা আয়াকে তার সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলামোফোবিয়া বেড়ে যাওয়ায় তার অনেক বন্ধুরা দেশ ছেড়েছেন।
এ মাসের শুরুতে একটি স্কুল বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এটি ছিল ইকরা কলেজ নামে অ্যাডিলেডের একটি ইসলামিক স্কুলের বাস।

মধ্যরাতে বাস-চালকের বাড়ির সামনের একটি আবাসিক রাস্তায় বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ বলছে, অগ্নিসংযোগের এ ঘটনার পেছনে বর্ণবাদ দায়ী ছিল বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কিন্তু হলুদ রঙের এই বাসটিতে একটি বড় সাইনবোর্ড ছিল যাতে লেখা ছিল এটি কোন স্কুলের, এবং ছোট করে ইসলামিক কলেজের নাম ও ঠিকানাও লেখা ছিল তাতে।

কামরাম তাহির হচ্ছেন অ্যাডিলেডের সবচেয়ে বড় মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন,
হামলাকারীদের 'কোনো মানবিকতা নেই'।

এসবিএস নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সাউথ অস্ট্রেলিয়া পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে এবং ব্যাপক সিসিটিভি অনুসন্ধানের পরও তারা কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা সূত্র শনাক্ত করতে পারেনি।

তাই নতুন কোনো তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত তদন্ত বন্ধ রাখবে তারা।

কিন্তু এরকম অগ্নিসংযোগের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, আয়া-র মতো অভিভাবকরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।

আয়া বলেন, নতুন বছরে সুরক্ষা জোরদার করার জন্য বাবা-মায়েরা একে অপরকে পুলিশকে ফোন করতে এবং তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

অতীতে ইসলামোফোবিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত শিক্ষক এবং পিতামাতার টহল বাড়িয়ে দিয়েছিল- তবে আয়া মনে করেন যে এটি আর যথেষ্ট নয়।

অস্ট্রেলিয়াজুড়ে মসজিদ ও মুসলিম স্কুলগুলো আরও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

সিডনির শহরতলী সেফটনের বাসিন্দাদের মধ্যেও ১৫ ডিসেম্বরে ইসলাম বিরোধী গ্রাফিতি দেখার পর থেকে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের অনুভূতি রয়েছে।

সেফটনের স্থানীয় একটি মসজিদ ও হুসাইনিয়াত আলে ইয়াসিন নামক সংস্থার মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ হুরানি বলেন, এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় হুমকি অনুভব করছে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিলও সিডনিতে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তারা ক্রমবর্ধমান সংকটকে স্বীকৃতি দিতে, বর্ণবাদবিরোধী নীতি জোরদার করতে এবং ঘৃণ্য অপরাধের তদন্তকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তাদের মুখপাত্র বিলাল রউফ বলেন,
দেশের সবাইকে এরকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে।

এই মুহূর্তে স্কুল ছুটির কারণে বন্ধ থাকায় আয়া কিছুটা নিশ্চিত। নতুন বছরের আগেই নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং ইসলামোফোবিয়াকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আপাতত আক্রমণের শিকার হলে কী করতে হবে, এসব বিষয়ে তার ১৩ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।

Share

Recommended for you