অভিবাসী কর্মীদের আরও সুরক্ষা চাই

A fruit farm near Griffith that needs working pickers (AAP).jpg

A fruit farm near Griffith that needs working pickers. Source: AAP

অভিবাসী কর্মীরা যারা অন্যায্য কর্ম-পরিবেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানিয়েছে অধিকার কর্মীরা। কারণ, সে-সব কর্মীদের অনেকেই এখনও ডিপোর্টেশনের আশঙ্কা করছেন। নতুন একটি রিপোর্টে জানা গেছে, নিয়োগদাতারা ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ পটভূমি থেকে আসা অভিবাসী কর্মীদেরকে টার্গেট করে নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে এবং সেগুলোতে ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম হারে মজুরি প্রদানের প্রস্তাব রাখছে।


কাজে যাতায়াতে সময় লাগে দু’ঘণ্টা, ঘণ্টায় ১০ ডলার করে; আর, তিন দিনে মোট ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর থেকে বিগত সাত বছর ধরে এ রকম অবস্থার মধ্য দিয়েই কাজ করছেন কর্মী অ্যাডি মঞ্জুর।

তবে, শুরুর দিকে তিনি ভেবেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় আসলে এই রকমই।
একই রকম বৈরী কর্ম-পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা হয়েছে কলাম্বিয়া থেকে আসা শিক্ষার্থী জেরালডিনেরও।

তিনি ভেবেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় এলে তার ইংরেজি-দক্ষতা বাড়বে এবং তিনি তার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিটিকেও কাজে লাগাতে পারবেন।

কিন্তু, বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম।

জেরালডিনের মতো অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু তাদের বঞ্চনার কথা প্রকাশ করতে পারেন না।

অ্যাডি এবং জেরালডিনের মতো আরও অনেকেই আছেন।

অ্যাকাউন্টিং ফার্ম প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স-এর পরিচালিত একটি সমীক্ষাতে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মীবাহিনীর ১৩ শতাংশই নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে মজুরি পায়। এক্ষেত্রে তাদের ক্ষতির পরিমাণ বছরে আনুমানিক ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু, এই সিস্টেমের বলি হয়েছে কিছু কিছু বিশেষ জনগোষ্ঠীর লোকজন। নিশ্চিত কর্মসংস্থানের জন্য তারা এমনিতেই সংগ্রাম করছেন।

ইউনিয়নস নিউ সাউথ ওয়েলস-এর একটি রিপোর্টে দেখা যায়, তিন ভাগের এক ভাগ কর্মীকে হয় নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে মজুরি দেওয়া হয় কিংবা কম হারে মজুরি প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাদের ভিসার ধরনের কারণে। আর, এক চতুর্থাংশেরও বেশি কর্মীকে এভাবে কম মজুরি দেওয়া হয় কিংবা মজুরির প্রস্তাব করা হয় তাদের জাতীয়তার কারণে।

ইউনিয়নের সেক্রেটারি মার্ক মোরেই বলেন, নিয়োগদাতারা ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ পটভূমি থেকে আসা কর্মীদেরকে টার্গেট করছে।
দেশজুড়ে অডিট করে ১০টি ইন্ডাস্ট্রির কাজের বিজ্ঞাপন পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিদেশী ভাষায় লিখিত ৭ হাজারেরও বেশি কাজের বিজ্ঞাপন এভাবে খতিয়ে দেখা হয়।

ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম হারে কাজের বিজ্ঞাপন দেওয়া এখন অবৈধ। এক্ষেত্রে পরিচালিত অডিট নিয়ে ইমিগ্রেশন মিনিস্টার অ্যান্ড্রু গাইলস বলেন, অধিক সংখ্যক মানুষ সামনে এগিয়ে না আসলে মজুরি ঠকানো বন্ধ হবে না।

অ্যাসাইলাম সিকার রিসোর্স সেন্টারের অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জেনা ফেভারো এসবিএস নিউজকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বঞ্চনার ফলে শুধুমাত্র আর্থিক চাপই সৃষ্টি হয় না, বরং আরও নানা রকম সমস্যাও দেখা দেয়।

অসহায় কর্মীরা যেন বিবেকহীন নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য অস্ট্রেলিয়ার রিপোর্টিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছে ইউনিয়ন নিউ সাউথ ওয়েলস।

আর, নিয়োগদাতাদের কাছে পাওনাদার কর্মীরা যেন তাদের পাওনা আদায় করতে পারেন এবং যত দিন পর্যন্ত না তাদের পাওনা আদায় হচ্ছে, সে পর্যন্ত যেন তারা কাজের অনুমতি-সহ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করতে পারেন, সেজন্য নতুন ও স্বতন্ত্র একটি ভিসার ব্যবস্থা করতে বলছে ইউনিয়ন নিউ সাউথ ওয়েলস।

এর সেক্রেটারি মার্ক মোরেই বলেন, এসব কর্মীর সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যাসাইলাম সিকার রিসোর্স সেন্টারের জেনা ফেভারো বলেন, অভিবাসী কর্মীদের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে উন্নতি হলে পুরো সমাজই এত্থেকে উপকৃত হবে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share