গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি এই জনপদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল
- এমন আলোচনা রয়েছে যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ববঙ্গের নগর-কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে ওঠার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে
ডঃ মোবাশ্বার হাসান একজন পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট, পাবলিক পলিসি কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিষয়ের লেখক, যিনি মানবিক বিষয়সমূহ নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন।
ডঃ হাসান 'ইসলাম এন্ড পলিটিক্স অফ বাংলাদেশ' এবং 'ন্যারেটিভস অফ বাংলাদেশ' নামে দুটি বইয়ের লেখক এবং যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন 'রেডিক্যালাইজেশন ইন সাউথ এশিয়া' শীর্ষক একটি বই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছর পূর্তি একটি 'আনন্দদায়ক ঘটনা' বলে উল্লেখ করেন ডঃ হাসান। তিনি বলেন, ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি এই জনপদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। শুধু তাই নয় এই জনপদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং জাতিগত রূপরেখার তৈরিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
এই প্রেক্ষিতে ডঃ হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেইসাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে মুক্তিযুদ্ধের সময়, এবং স্বাধীনতার পরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ভূমিকা আছে।"কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মূল কনসেপ্ট...শিক্ষা এবং গবেষণায় এগিয়ে যাওয়া, সেই জায়গাটায় ঘাটতি আছে।"
Dr Mobashar Hasan, Adjunct Fellow, University of Western Sydney Source: Dr Mobashar Hasan
এ প্রসঙ্গে ডঃ হাসান তার নিজের প্রকাশিতব্য একটি গবেষণা উল্লেখ করে বলেন, "এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বর্তমানে একধরণের লিখিত এবং অলিখিত বিধিনিষেধ আছে। অথচ গবেষণাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়াতে মূল ভূমিকা রাখে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়, সরকার এজন্য ফান্ডিং দেয়, একাডেমিকরা এজন্য প্রতিযোগিতা করে, কিন্তু সেখানে কোন রাজনীতি নেই; বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বর্তমানে গবেষণার যে পরিবেশ সেখানে (রাজনীতি) আছে।"
"ওই জায়গা থেকে দেখা যায় যে শিক্ষকরা অনেকেই এ ব্যাপারে কথা বলতে ভয় পান, একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাসের ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কথা বললে অনেকে চাকরিও হারাতে পারেন," বলেন তিনি।
তবে ডঃ হাসান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে যে সীমিত আকারে হলেও গবেষণার জন্য কিছু প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
এমন একটি আলোচনা রয়েছে যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ববঙ্গের নগর-কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে ওঠার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।
এ প্রসঙ্গে ডঃ হাসান বলেন, "সেই সময়ে দুই বঙ্গের মধ্যে শিক্ষার হারের ক্ষেত্রে 'বৈষম্য' ছিল ....শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে পূর্ববঙ্গ পিছিয়ে ছিল। সেই দৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে একটি শিক্ষিত সমাজ, কিংবা নগর-কেন্দ্রিক বা নগরের বাইরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা রেখেছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নানা শ্রেণিভেদের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা জায়গা যেখানে আমরা শিক্ষার্থীরা সবাই বন্ধু হয়ে উঠি, এবং আমাদের ক্যাম্পাস জীবনে পড়াশোনার চেয়ে আড্ডাটাই ছিল বেশি।
ডঃ মোবাশ্বার হাসানের পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
আরও দেখুন: