গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:
- হাজার বছর ধরে ফার্স্ট অস্ট্রেলিয়ানদের অর্থাৎ আদিবাসীদের সংস্কৃতির অংশ হিসাবে রীতি-রেওয়াজ ও আদব-কেতার প্রচলন হয়ে আসছে।
- আদিবাসী সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের অর্থাৎ এবরিজিনাল এল্ডারদের অত্যন্ত সম্মান করা হয়, আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান জানতে তাদের কাছে যেতে হয়।
- আদিবাসী সমাজের রীতি-রেওয়াজের বিষয়ে কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক, তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়
- শ্রদ্ধাপূর্ণ এবং সংবেদী ভাষার ব্যবহার করে আমরা শ্রদ্ধার প্রদর্শন করতে পারি।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সমাজের নীতি ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে ইন্ডিজেনাস কালচারাল প্রটোকল বা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী রীতি-রেওয়াজ ও আদব-কেতার চর্চা হয়ে আসছে আবহমান কাল ধরে। এদেশের আদিবাসী অর্থাৎ এবোরিজিনাল এবং টরে’স স্ট্রেট দ্বীপবাসীর সাথে কাজ করতে বা মেলামেশার সময় তাদের রীতি-রেওয়াজ মেনে চলা বাঞ্ছনীয় কেননা তারাই এদেশের ভূমিপুত্র। তারা এদেশে প্রথম মনুষ্যবসতি গড়ে তুলেছেন বলে তাদেরকে ফার্স্ট নেশন পিপল বা ফার্স্ট অস্ট্রেলিয়ান বলা হয়।
এবরিজিনাল এবং টরে’স স্ট্রেট দ্বীপবাসীর সাথে এদেশের সম্পর্ক সুনিবিড়। এদেশের ভূমি, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুকে তাদের চেয়ে ভাল আর কেউ জানেননা। তাই এদেশের পরিবেশ, প্রকৃতিকে ভালভাবে বুঝতে হলে তাদের কাছ থেকেই তা বুঝতে হবে।অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরি অঞ্চলের বাসিন্দা ক্যারোলিন হি্ভাবস একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ঞুনাওয়াল আদিবাসী । সাংস্কৃতিক জ্ঞানের আকর হিসাবে তিনি সবার কাছে সম্মানিত। তিনি জানান, আবহমান কাল ধরে পালিত আদিবাসী রীতি-রেওয়াজ আজও আধুনিক অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত রয়েছে।
Buja Buja dance troupe performs during the Wugulora Indigenous Morning Ceremony in Sydney Source: AAP Image/AP Photo/Rick Rycroft
এসবিএস এর এল্ডার ইন রেসিডেন্স রোডা রবার্টস বলেন, সাংস্কৃতিক রীতি রেওয়াজ মানার মাধ্যমে আমরা এদেশের মাটি ও মানুষের মধ্যকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে স্বীকৃতি জানাই; আমরা প্রকৃতি ও প্রকৃতির আদি সন্তান- ফার্স্ট অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যকার সম্পর্ক ও রীতিনীতির প্রতি সম্মান জানাই।
অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে ‘ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ান’ বলতে এবরিজিনাল এবং টরে’স স্ট্রেইট দ্বীপের বাসিন্দা উভয়কেই বোঝায়। যদিও তারা নিজেদের স্বতন্ত্র জাতিগত পরিচয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ে পরিচিত হতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ প্রসঙ্গে ক্যারোলিন হিউজেস বলেন,
আমাদের এবরিজিনাল এন্ড টরে’স স্ট্রেট আইল্যান্ডার বলায় আপত্তি নেই, তবে আমাকে ঞুংনাওয়াল নারী বললেই আমি বেশি খুশি হই, কেননা এটাই আমার ‘দেশ’। আমাদের কাছে দেশ মানে আমার ভাষা আর আমাদের জাতিগোষ্ঠী— যা আমার পরিচয়কে তুলে ধরে, আমি কোন স্থান থেকে আসছি।
এনএসডব্লিউ বা ভিক্টোরিয়ার এবরিজিনালরা ‘কুরি’ নামেও পরিচিত । ক্ষেত্র বিশেষে ‘মুরে’ বলা হয় কুইন্সল্যান্ডের আদিবাসীদের আর ‘পালাওয়া’ বলা হয় তাসমানিয়ার এবরিজিনালদের।মিস্টার থমাস মেয়র একজন টরে’স স্ট্রেট আইল্যান্ডার এবং মেরিটাইম ইউনিয়নের ন্যাশনাল ইন্ডিয়াজেনাস অফিসার।
Source: AAP Image/Tracey Nearmy
তিনি বলেন, ফার্স্ট নেশন জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকে একে অপরের চাইতে কিছুটা বা অনেকাংশে আলাদা তবে এবোরিজিনাল জনগোষ্ঠীর সাথে আইল্যান্ডারদের পরিস্কার ভিন্নতা রয়েছে, তাই তারা নিজস্ব পরিচয়েই পরিচিত হতে চান। এই দুইটি বৃহত্তর জনজাতির সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি জানাতে এদেশে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় পতাকার পাশাপাশি এবরিজিনাল এবং টরে’স স্ট্রেইট দ্বীপবাসীর পতাকা উভয়ই উত্তোলন করা হয়।
ইংরেজীতে লেখার সময় প্রতিটি শব্দকে প্রোপার নাউন হিসাবে প্রকাশ করা হয় যেখানে ইন্ডিজেনাস, এবরিজিনাল, টরে’স স্ট্রেট আইল্যান্ডার এবং কান্ট্রি প্রত্যেকটির শুরু হয় ক্যাপিটাল অক্ষর দিয়ে। ক্যারোলিন হিউজেস জানান, আদিবাসীদের নামকে কোনভাবেই সংক্ষেপিত করা উচিৎ নয়, এতে করে তারা অপমান বোধ করেন।আদিবাসীদের উপাধি আর আদব-কেতার বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে এবরিজিনাল রোডা রবার্টস বলেন, আদিবাসী সমাজে এল্ডারস বা বয়োজ্যেষ্ঠরা সেই সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জ্ঞানের আকর হিসাবে বিবেচিত হন। তারাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ে অপরকে জ্ঞান দানের সক্ষমতা ও অধিকার রাখেন। উল্লেখ্য যে, ভূমির অভিভাবক বা কাস্টডিয়ান এবং এল্ডার এই দুইটি বিশেষ্য পদ ইংরেজীতে প্রোপার নাউন হিসাবে লেখা হয়, আর তাদের শুরুতেও ক্যাপিটাল অক্ষর রয়েছে।
The Everett Dancers from Pakana/Palawa perform at the University of Tasmania Stadium Source: AAP Image/Tracey Nearmy
বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে সম্মান জানাতে এবরিজিনাল এবং টরেস স্ট্রেট আইল্যান্ডাররা আংকেল আর আন্টি ডেকে সম্বোধন করে থাকেন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাইরের কেউ তাদেরকে এই সম্বোধনে বা কী নামে ডাকতে পারবেন, তা আগে জেনে নেওয়াই সঙ্গত।
সম্প্রদায়ের এল্ডারদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বদেশের ভূমিতে অতিথিদের স্বাগত জানানোর রেওয়াজকে বলা হয় "ওয়েলকাম টু কান্ট্রি"। কোন কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করে “ওয়েলকাম টু কান্ট্রি” পর্ব পালন করা হয়।১৯৮০ সালে রোডা রবার্টস এই রীতির সূচনা করেছিলেন। বক্তব্যের মাধ্যমে, নৃত্যের মাধ্যমে বা স্মোকিং সেরেমনির মাধ্যমে ওয়েলকাম টু কান্ট্রি পর্বটি বিভিন্নভাবে পালন করা যায়।
Both the Aboriginal and Torres Strait Islander flags are flown alongside the Australian national flag to acknowledge these distinct Indigenous peoples Source: AAP Image/Mick Tsikas
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরুতে ভূমির স্বীকৃতি বা ‘একনলেজমেন্ট অফ কান্ট্রির’ রেওয়াজের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিভূমি ও আদিবাসীর স্বীকৃতি জানানো হয়।
ক্যারোলিন হিউজেস বলেন, আদিবাসীদের উপর চালিত ঐতিহাসিক নিপীড়নের কথা আমাদের জানা দরকার এবং তার স্বীকৃতি জানানো জরুরি। আদিবাসী কারোর অতীত, গায়ের রঙ ইত্যাদি ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা অনুচিত।
থমাস মেয়র এর মতে সাংস্কৃতিক রীতি-রেওয়াজ আর আদিবাসীয়া সংস্কৃতি জানার জন্য প্রশ্ন করার সময় আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিনয় থাকতে হবে।
এসবিএস এর এল্ডার ইন রেসিডেন্স ক্যারোলিন হিউজেস এর মতে সামাজিক রীতি রেওয়াজের প্রচলন হয়েছে মানবিকতা চর্চার জায়গা থেকে, মানুষ হিসাবে অপরকে শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি জানানোর সর্বজনীন আচার থেকে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।