হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে, তাদের অজান্তে এবং পরিবারের কারো সম্মতি ছাড়াই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শক্তিশালী এ-আই টুলস-এর প্রশিক্ষণের জন্য একটি ডাটা সেট ব্যবহার করা হয়েছে। আর এতে রয়েছে মূলত ইন্টারনেট থেকে স্ক্র্যাপ করা অর্থাৎ, নানাভাবে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত। তবে সমস্যা হলো, এগুলোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের সনাক্ত-যোগ্য ছবির লিঙ্ক রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শিশু-অধিকার ও প্রযুক্তি গবেষক হাই জং হান এসবিএস-কে বলেন, ডাটা সেটে তারা যেসব ছবির খোঁজ পেয়েছেন সেগুলোর বেশিরভাগই ঘনিষ্ঠ পারিবারিক মুহূর্তের।
চলতি বছরের শুরুর দিকে মেলবোর্নের একটি হাইস্কুলের প্রায় ৫০ জন ছাত্রী অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ডিপ-ফেইকের শিকার হয়েছেন। এক্ষেত্রে, তাদের সম্মতি ছাড়াই এ-আই ইমেজ টুল ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্মতি ছাড়াই প্রাপ্তবয়স্কদের কুরুচিপূর্ণ যৌন ডিপ-ফেইক তৈরি বা শেয়ার করা নিষিদ্ধ করার সংস্কার প্রস্তাব সম্প্রতি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মার্ক ড্রেইফাস।
তবে, এই সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিশুদের ছবির এই জাতীয় অপব্যবহারকে ফৌজদারি আইনের অধীনে শিশু নির্যাতনের উপাদান হিসেবে বিবেচিত করা অব্যাহত থাকবে।
হাই জং হান বলেছেন, এই উদ্যোগটিতে শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার রোধের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে আলোকপাত করা হয় নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে,
ব্যবহৃত কিছু ছবির সাথে শিশুদের পুরো নাম এবং বয়সও অন্তর্ভুক্ত ছিল; এমনকি তারা যে স্কুল বা প্রি-স্কুলে পড়েছিল তার নামও ছিল।
সমীক্ষাটিতে আরও দেখা যায়, এসব ছবির বেশিরভাগই ইন্টারনেটের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তার মানে হলো, এগুলোর অধিকাংশই ব্যক্তিগত ব্লগ, স্কুল ফটোগ্রাফারের আপলোড এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত ফটো শেয়ারিং সাইটগুলো থেকে স্ক্র্যাপ বা নানাভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
অ্যাডেলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর মেশিন লার্নিংয়ের পরিচালক সাইমন লুসি বলেন, ওয়েব স্ক্র্যাপিং টুলগুলো এখন বিপুল পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করে; ফলে এটি তদারক করার বিষয়টিও আরও কঠিন হয়ে যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় ছিল অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট নেশন শিশুদের ছবি ব্যবহার।
হাই জং হান বলেছেন যে, অনেক ছবি ইন্টারনেটের এমনসব জায়গা থেকে স্ক্র্যাপ বা সংগ্রহ করা হয়েছে যেগুলোতে সাধারণত সবার অ্যাক্সেস বা প্রবেশাধিকার থাকে না। এছাড়া, ডাটা সেটে অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট নেশন্স শিশুদের ছবি ব্যবহার করা তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, একবার ডাটা স্ক্র্যাপ হয়ে গেলে মূল ডাটাসেট থেকে এটি সরিয়ে ফেললেও, এ-আই মডেল সেই তথ্যটি ভুলে যাবে না।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, শিশুদের আপত্তিজনক যৌন কন্টেন্ট তৈরি এবং ম্যানিপুলেট করার ক্ষেত্রে এ-আই টুলগুলোর সম্ভাব্য ব্যবহার।
সাইমন লুসি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা তথ্য সুরক্ষার কথা বললেও এ-আই এর সম্প্রসারণের ফলে প্রায়ই তথ্য ফাঁস এবং অপব্যবহার হচ্ছে।
সাইমন লুসি বলেছেন,
নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক আইন প্রায়শই সমস্যাগুলো সম্পূর্ণরূপে সমাধান করতে সক্ষম হয় না; কারণ, তা কেবল সমস্যার প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার পরেই সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া যদি এ-আইয়ের উত্থানকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে চায় তবে কেবল অন্যের নেতৃত্ব অনুসরণ না করে নিজেদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সরকার শিশুদের নিরাপদ করতে প্রাইভেসি অ্যাক্ট-এ পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে।
তাই, এই প্রতিবেদনটি অবিভাবকদেরক অনলাইনে তাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন করলেও, প্রস্তাবিত নতুন আইনটি আরও ভালভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে বলে আশা করেন হাই জং হান।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আপনি কি জানেন, এসবিএস বাংলা অনুষ্ঠান এখন ইউটিউব এবং পাওয়া যাচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা আমাদের প্লাটফর্ম বিস্তৃত করছি। এসবিএস সাউথ এশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য।
এসবিএস বাংলা টিউন করুন এসবিএস অন ডিমান্ডে সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায়। দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য ভাষায় সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো সরাসরি শুনতেও অন ডিমান্ডে টিউন করুন।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুনএসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভিজিটকরুন আর, এসবিএস বাংলার এবং ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন চ্যানেল।
উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস।