২০১২ সালে প্রফেশনাল সার্ভিসেস রিভিউ কমিটির সাবেক প্রধান টনি ওয়েবার এবিসি-র কাছে সাংঘাতিক একটি দাবি করেছিলেন।
এবিসি নেটওয়ার্কের AM প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে ড. ওয়েবার অভিযোগ উঠা সেই প্রতারণার কিছু উদাহরণ দেন, যে সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি এগুলো নিজে দেখেছেন।
সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মেডিকেয়ারের মাধ্যমে রোগীরা দাঁতের চিকিৎসা করাতেন, যখন তারা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন না। সেই সময়ে, এই একটি মাত্র শর্তে, অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হলে মেডিকেয়ারের আওতায় দাঁতের চিকিৎসা করানো যেত।
ড. ওয়েবার আরও অভিযোগ করেন যে, কসমেটিক পারপাসে বা সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে জেনিটাল সার্জারির ক্ষেত্রেও ডাক্তাররা মেডিকেয়ার কভার ব্যবহার করতেন। তিনি একে ‘ডিজাইনার ভ্যাজাইনাস’ বলে অভিহিত করেন।
সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা A-M-A এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ড. স্টিভ হ্যামব্লেটন। তিনি এসব দাবি সরাসরি নাকচ করে দেন।
এখন, ২০২২ সালে, একই ধরনের ঘটনার অভিযোগ করা হচ্ছে আর ডাক্তারদের কাছ থেকেও সেই একই ধরনের জবাব পাওয়া যাচ্ছে।
এবিসি এবং নাইন নেটওয়ার্কের যৌথ তদন্তে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, মেডিকেয়ার খাতে প্রতারণার মাধ্যমে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
তারা ড. ওয়েবার এবং একটি বিলিং কোম্পানির মালিক ও মেডিকেয়ার কমপ্লায়েন্সের একজন বিশেষজ্ঞ, ড. মার্গারেট ফো-এর উদ্ধতি দিয়ে বলছে, মেডিকেয়ারে ব্যাপকভাবে অনিয়ম হচ্ছে এবং অযথার্থভাবে বিলিং করা হচ্ছে।
কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।
হেলথ মিনিস্টার মার্ক বাটলার বলেন, ৮ বিলিয়ন ডলারের অঙ্কটি কিছুটা বেশি।
তবে, তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রেজারার জিম চ্যালমার্স।
ড. মার্গারেট ফো স্কাই নিউজকে বলেন, এর জন্য তিনি আট বছর কাজ করেছেন।
কিন্তু ডাক্তারদের সংগঠন A-M-A এবং রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অফ জেনারেল প্রাকটিশনার্স বা R-A-C-G-P এর সঙ্গে একমত নয়।
অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা এ-এম-এ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ড্যানিয়েলা ম্যাকমালেন বলেন, ডাক্তাররা কখনও বলে নি যে, প্রতারণার ঘটনা কখনই ঘটে না।
তিনি বলেন, ড. ফো এবং সংবাদ প্রতিবেদনগুলো এই সমস্যাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অনেক অতিরঞ্জিত করে বলছে।
ড. ম্যাকমালেন বলেন, আসল স্ক্যান্ডাল হলো মেডিকেয়ার অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল এবং এটি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে নি।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অফ জেনারেল প্রাকটিশনার্স বা R-A-C-G-P এর প্রফেসর ক্যারেন প্রাইস বলেন, ডাক্তারদেরকে লোভী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এটা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তার-রোগীর মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর কুপ্রভাব পড়তে পারে।
প্রফেসর প্রাইস বলেন, মেডিকেয়ার রিবেট বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়েছে নিয়মিত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। কোনো রোগীর জন্য একজন জিপি কতটুকু সময় ব্যয় করতে পারবেন, সেই বিষয়টি এর দ্বারা নির্ধারিত হয়।
তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগগুলোর কারণে ডাক্তারদের নিয়োগ করা আরও কঠিন হবে।
মেডিকেয়ার সিস্টেমে চারটি পর্যায়ের কমপ্লায়েন্সের ব্যবস্থা আছে। মেডিকেয়ারের এই জবাবদিহিতার বিষয়টিকে A-M-A এবং R-A-C-G-P উভয় সংগঠনই ‘কঠোর’ বলে অভিহিত করেছে।
পৃথকভাবে তারা বলেছে, ডাক্তাররা যখনই কোনো ব্যাখ্যা চান, তখন আইটেম নাম্বার এবং অফিসিয়াল অ্যাডভাইসগুলো সবসময় একই রকম থাকে না।
ড. ম্যাকমালান বলেন, বহু ডাক্তার সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন যে, তারা হয়তো হঠাৎ করে কোনো ভুল করে ফেলবেন।
কিন্তু, ড. ফো বলেন, ‘খুবই পরিস্কার’ সাক্ষ-প্রমাণ রয়েছে যে, মেডিকেয়ারের চার পর্যায়ের কমপ্লায়েন্স ফলপ্রসূভাবে কাজ করে না।
তিনি যে-সব দাবি করছেন সেগুলো বোঝার জন্য তিনি সবাইকে তার ডক্টরাল থিসিসটি পড়তে বলেন।
অনলাইনে এই থিসিসটি আর অ্যাকসেস করা যাচ্ছে না।
কিন্তু, এসবিএস নিউজ এই থিসিসটির কিছু পৃষ্ঠা সংগ্রহ করতে পেরেছে। সেখানে মেডিকেয়ার বিলিং-এর বিষয়টিকে ফ্রড এর পরিবর্তে ‘লিকেজ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই পৃষ্ঠাগুলোতে বলা হয়েছে, এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, মেডিকেল প্রাকটিশনার্সগণ সুচিন্তিতভাবে মেডিকেয়ার বিলিংয়ের অপব্যবহার করেছে। বরং, বলা হয়েছে যে, এই ব্যবস্থাটি অত্যন্ত জটিল যা ডাক্তাররা পরিহার করতে পারে না।
মেডিকেয়ার খাতে রয়্যাল কমিশনের আহ্বান জানিয়েছে ড. ফো। ফেডারাল সরকার এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে কিনা তা বলাটা সম্ভব নয়।
প্রফেসর প্রাইস আশা করেন যে, বাজেটে এ নিয়ে কিছু একটা করা হবে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: