অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী সম্প্রদায়ে পারিবারিক সহিংসতা যেভাবে রোধ করা যায়

Services say the lockdown measures are placing women at increased risk.

Source: Press Association

অস্ট্রেলিয়ায় পারিবারিক, গার্হস্থ্য এবং যৌন সহিংসতা অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে দুইজন শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। যে কেউই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারেন।


পারিবারিক ও গৃহস্থালি সহিংসতাকে আগে সামাজিক সমস্যা হিসাবে নয় বরং ব্যক্তিগত বা একান্ত পারিবারিক বিষয় হিসাবে গণ্য করা হত। সময়ের সাথে সাথে এই ধারণার প্রতিবর্তন ঘটেছে। এটি এখন ব্যাপক আলোচিত ও বিস্তৃত একটি বিষয়।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যায় দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান সহিংসতার শিকার হন।

অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে প্রতি ছয়জন নারীর একজন ও প্রতি আঠার জন পুরুষের মধ্যে একজন তার জীবনসঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন।

অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে প্রতি ছয়জন নারীর একজন ও প্রতি আঠার জন পুরুষের মধ্যে একজন তার জীবনসঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন।

ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সেন্টার ফর চাইল্ড প্রটেকশন এর গার্হস্থ্য ও পারিবারিক হিংস্রতা বিশেষজ্ঞ নাদা ইব্রাহিম বলেন,
ফ্যামিলি ভায়োলেন্স বা পারিবারিক সহিংসতার ইস্যুটি একটি সুবিস্তৃত বিষয় যেখানে পরিবার বা গৃহস্থালি পরিবেশে সঙ্ঘটিত যেকোন হিস্রতা বা সহিংস ঘটনা অন্তর্ভুক্ত। এই সহিংসতা হতে পারে জীবনসঙ্গী বা পার্টনারের মধ্যে, হতে পারে চাইল্ড এবইউজ বা শিশু নির্যাতন ইত্যাদি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই পারিবারিক, গার্হস্থ্য ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। এই সহিংসতা বিভিন্নভাবে নারীকে আক্রান্ত করতে পারে। নারীরা বিভিন্নভাবে হতে পারেন — আর্থিক ভাবে, মানসিক ভাবে, জবরদস্তি নিয়ন্ত্রণ বা কোয়েরসিভ কন্ট্রোলের মাধ্যমে, হয়রানি বা হ্যারাসমেন্ট এর মাধ্যমে।
কেবল শারীরিক অত্যাচারকেই অনেকে সহিংস আচরণ মনে করেন যাকে আজকের যুগে বাতিল ধারণা হিসাবে মত দিয়েছেন ডক্টর ইব্রাহিম। তিনি বলেন,
সাংস্কৃতিক জীবনাচরণের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া অনেক আচার শাস্তিস্বরূপ হতে পারে যাকে পারিবারিক নিপীড়ন হিসাবে গণ্য করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাস বা যৌথ পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে পারিবারিক নিপীড়ন পরিস্থিতি জটিল রূপ লাভ করে।

বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির (কালচারালি ডাইভার্স) পারিবারিক জটিলতা আর পারিবারিক সহিংসতার স্বরূপ বিচিত্র হতে পারে। বিভিন্ন সংস্কৃতির জীবনাচরণে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনেক দিক থাকতে পারে যা অন্য সংস্কৃতির মানুষের বোঝা কঠিন হতে পারে। তেমনি একেকটি পরিবারের অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিন্নতাও সমাজকর্মের কর্মীদের (কমিউনিটি বা সোশ্যাল ওয়ার্কার) আমলে নেওয়া দরকার; যদিও সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব সমাজকর্মী আর প্রতিষ্ঠানের এমন সক্ষমতা থাকেনা।
অস্ট্রেলিয়ার মত বহুসাংস্কৃতিক দেশে cross-cultural বা আন্তঃসাংস্কৃতিক সক্ষমতা থাকা দরকার। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংগঠন এই বিশেষায়িত সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে থাকে, যেমন “inTouch”, “Kulturebrille” ইত্যাদি। এ ধরনের সংগঠনগুলো মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি বা বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করে থাকে।
“ইনব্রাইট” সংগঠনটি অভিবাসী ও শরনার্থী কমিউনিটির পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে কাজ করে থাকে। অন্যদিকে “কালচারব্রিল” মূলত একটি পরামর্শক সংস্থা বা কনসালটেন্সি ফার্ম যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকে। বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবারগুলোতে সহিংসতার বিষয়ে তারা বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করে থাকে।

এই সংস্থার পরিচালক আনু কৃষ্ণান বলেন,
"অভিবাসী সম্প্রদায়ের এদেশে নতুন জীবন আর নতুন সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটা চাপ থাকে; তার সাথে বাড়তি চাপ হিসাবে যোগ হয় নিজের যোগ্যতামাফিক কাজ খুঁজে পাওয়া, ক্যারিয়ারের চিন্তা আর লৈঙ্গিক সমতার সংস্কৃতির সাথে তাল মেলানোর চ্যালেঞ্জ।"
পারিবারিক সহিংসতা রোধ করতে হলে পুরো কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে করতে হবে, তবেই তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন মিস কৃষ্ণান। তিনি আরও বলেন,

অভিবাসী নারীরা সাহায্য চাইতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হন। তারা নিঃসহায় এবং আপনজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি আরও জানান,
তারা অভিযোগ জানাতে বা রিপোর্ট করতে ভয় পান। রিপোর্ট করলেও তাদের যাওয়ার জায়গা থাকেনা কেননা তাদের অন্যের সাহায্য নেওয়ার অভ্যাস নেই বা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে তারা অনিচ্ছুক। অনেক সময় নারী আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে তাদের কিছু পূর্বানুমান থাকে। অনেক নারী ভিসা জনিত কারণে সঙ্গীর উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। অনেকের বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় থাকেনা।
এইমেস অস্ট্রেলিয়ার (AMES Australia) নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ বা “Prevention of Violence Against Women Program” এর সিনিয়র ম্যানেজার ওয়েন্ডি লবওয়েইন পুরুষদের ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে বলেন, নারীর সাথে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে সমাজে একটা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পুরুষদের এগিয়ে আসা দরকার।
বর্তমানে পারিবারিক সহিংসতার শিকার অভিবাসী নারীদের পরিষেবায় অনেক সংস্থা কাজ করছে। তাদের অনেকেরই অনুবাদক যারা সব ভাষায় সেবা দিয়ে থাকে।

পারিবারিক অত্যাচারের শিকার নারীরা জিপি বা ডাক্তারের কাছেও অভিযোগ জানাতে পারেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার ভুক্তোভোগী নারীকে স্থানীয় পরিষেবা কেন্দ্রে যেতে সাহায্য করতে পারবেন। তবে জরুরী পরিস্থিতিতে দেরি না করে সাহায্যের জন্য ট্রিপল জিরোতে ডায়াল করতে হবে।

যেখানে সাহায্য পাবেন:

  • আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে সাহায্যের জন্য ডায়াল করুন ১৮০০ রেসপেক্ট বা ১৮০০ ৭৩৭ ৭৩২
  • মানসিক সাহায্যের জন্য লাইফলাইন নাম্বারে কল করুন- ১৩১১১৪ বা কল করুন বিয়ন্ড ব্লু এর নাম্বারে- ১৮০০ ২২ ৪৬ ৩৬
  • অনুবাদকের দরকার হলে কল করুন ১৩ ১৪ ৫০
অস্ট্রেলিয়ায় পারিবারিক সহিংসতার সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত থ্রিলার সিরিজ “সেফ হোম” ১২ মে বৃহস্পতিবার থেকে প্রচারিত হচ্ছে এসবিএস এবং

পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে জানতে আরও দেখুন:
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share