হাইলাইটস
- মেট্রোপলিটন পার্থ এবং পিল ও সাউথ ওয়েস্ট রিজিওনে, রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে লকডাউন জারি করা হয়। এটি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বজায় থাকবে।
- কোয়ারেন্টিন হোটেলের একজন নিরাপত্তা-রক্ষী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে গতকাল ৩১ জানুয়ারি এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
- বিগত ১০ মাসে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, কার্টিন ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট সোহানা আক্তার বলেন, “আসলে এই লকডাউনটা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। এটি একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি।” Source: Sohana Akter
একটি কোয়ারেন্টিন হোটেলের একজন নিরাপত্তা-রক্ষী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে গতকাল ৩১ জানুয়ারি এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
মেট্রোপলিটন পার্থ এবং পিল ও সাউথ ওয়েস্ট রিজিওনে, রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে লকডাউন জারি করা হয়। এটি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বজায় থাকবে।
সেখানকার বাসিন্দাদেরকে অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। তবে, অপরিহার্য কেনাকাটা, মেডিকেল কিংবা হেলথকেয়ারে যাওয়া, বাড়ির আশেপাশে ব্যায়াম করা, এবং যদি ঘরে বসে কাজ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে কাজে যাওয়া— এসব ক্ষেত্রে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে।
পার্থের সেই হোটেল কোয়ারেন্টিন সিকিউরিটি গার্ডের করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয় গত শনিবারে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত সেই ব্যক্তি এক ডজনেরও বেশি ভেন্যুতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি যে কোভিড-আক্রান্ত সেটা তিনি তখনও জানতেন না।
বিগত ১০ মাসে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর সমীর চ্যাটার্জি। Source: Samir Chatterjee
লকডাউন ছিল অপ্রত্যাশিত
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, কার্টিন ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট সোহানা আক্তার বলেন,
“আসলে এই লকডাউন্টা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। এটি একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি। মানুষজন খুবই প্যানিকড হয়েছে এই লকডাউনের জন্য।”
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর সমীর চ্যাটার্জিও বলেন,
“রবিবার, ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছ’টায় হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বিস্তৃত জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রে পাঁচ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি, যিনি হোটেলে নিরাপত্তা ও উবার-চালক, তার কোভিড সনাক্তকরণেই এই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ১১ মাস কোভিড সংক্রমণ বন্ধ রাখার সাফল্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মানুষদের নিশ্চিতভাবে আত্মতুষ্টির মধ্যে ভরিয়ে রেখেছিল। তাই, ঘোষণার সাথে সাথেই, বাজারে, দোকানে অভূতপূর্ব এক বিশৃঙ্খলা দেখা যায় এই সময়ে।”
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেইন বলেন,
“লকডাউন ঘোষণার দিন নিত্যদিনের মতো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডেস্কে কাজ করতে উপস্থিত। কম্পিউটার অন করতেই জানতে পারলাম, সন্ধ্যা থেকে লকডাউন শুরু। জীবনের স্পন্দন যেন হঠাৎ করেই থেমে গেল। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রিপারেশনের জন্য স্বাভাবিকভাবেই আমার ল্যাপটপ-সহ অন্যান্য রিডিং ম্যাটেরিয়াল গোছানোর জন্য আমি তাড়াহুড়া শুরু করে দিলাম। আমার ঠিক জানা নেই সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম কী হবে। ধারণা করছি, আগের মতো অনলাইনই হবে উপযুক্ত যোগাযোগ মাধ্যম।
এসেনশিয়াল ওয়ার্কার সাথীয়া খান বলেন, “আমি জানি না আমি আমার ছেলেকে এখন কোথায় রেখে কাজ করবো"। Source: Sathia Khan
লকডাউন ঘোষণার ইতিবাচক দিকসমূহ
লকডাউন ঘোষণায় নানা ইতিবাচক দিকও দেখতে পেয়েছেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা।
আশরাফি ফেরদৌসী বলেন,
“আর, আমি মনে করি, কোভিড-প্যানডেমিকের সময়ে, আমরা পার্থে অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় ভাল ছিলাম। যদিও হঠাৎ করে আজ আমার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, তবে বৃহত্তর স্বার্থে লকডাউনের এই সিদ্ধান্তকে আমি ইতিবাচক, সময়োপযোগী হিসেবে মনে করছি। আর আশা করছি, পাঁচ দিন পর, আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সোহানা আক্তার বলেন,
“কিন্তু, যে ইতিবাচক দিকগুলো রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, মানুষজন অনেক সতর্ক হয়েছে এবং তারা মাস্ক ব্যবহার করছে। তারা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছে।”
আফটার স্কুল চাইল্ডকেয়ার এডুকেটর আশরাফি ফেরদৌসী বলেন, আফটার স্কুল চাইল্ডকেয়ার খোলা বা বন্ধ থাকা বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসে নি। Source: Ashrafi Ferdousy
লকডাউনে ভোগান্তির শিকার কারা?
হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণায় অনেকেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
এসেনশিয়াল ওয়ার্কার সাথীয়া খান বলেন,
“দশ মাস পরে আবারও লকডাউনে আমরা। আমি এবং আমার হাসব্যান্ড, দু’জনেই এসেনশিয়াল ওয়ার্কার। আমার আট বছরের ছেলে, যে নাকি ক্লাস থ্রিতে যাবে, আর মেয়ে তিন বছরের। সে যায় চাইল্ডকেয়ারে। যেহেতু এসেনশিয়াল ওয়ার্কার, সেহেতু আমি জানি না আমি আমার ছেলেকে এখন কোথায় রেখে কাজ করবো। স্কুর বন্ধ ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভ্যাকেশন কেয়ারও নেই। সুতরাং কীভাবে আমরা কী ম্যানেজ করবো— এটা পুরোপুরিই অনিশ্চিত। এখন, অবস্থা এমন যে, হয় আমাকে কাজ বন্ধ করতে হবে, নাহয় আমার স্বামীকে কাজ বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কী উপায়— কেউই বুঝতে পারছি না।”
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সোহানা আক্তার বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অনেকেই কাজ হারাচ্ছেন।
“আর নেতিবাচক যে দিকগুলো আছে সেগুলো হলো: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এটা খুবই খারাপ হয়েছে। কারণ, তারা তাদের অনেকেই জব হারাচ্ছে। তাদের যে উপার্জনের উৎস, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর ওয়েস্ট পয়েন্টগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই, যারা ব্যবসা করছে, তাদের জন্য খুবই খারাপ হয়েছে এই লকডাউন। কিন্তু, আমি বলবো যে, এটা আসলে দরকার ছিল। সাধারণ মানুষ এবং সবার ভাল এবং নিরাপদ জীবনের জন্য।”
আফটার স্কুল চাইল্ডকেয়ার এডুকেটর আশরাফি ফেরদৌসী বলেন,
“আমরা জানি যে, স্কুল আরও এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু, আফটার স্কুল চাইল্ডকেয়ার খোলা বা বন্ধ থাকা বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসে নি। তাই অপেক্ষা করছি পরবর্তী ঘোষণার জন্য।”
তবে, যারা ঘরে থেকে কাজ করতে পারছেন, তাদের বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
পার্থের বাসিন্দা ফজল সাদিক বলেন,
“আট বছর ধরে পার্থে বাস করি। আমি একটা এনার্জি কোম্পানিতে কাজ করি। আমার ওয়াইফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল টিচার। লকডাউনের কারণে আমাদের কাজে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, আমরা গত প্রায় এক বছর থেকে ওয়ার্কিং ফ্রম হোম সেট-আপে কাজ করে অভ্যস্ত। আমাদের আট বছরের ছেলে আশাহত যে, সে তার স্কুল শুরু করতে পারলো না আজকে।”
পার্থের বাসিন্দা ফজল সাদিক বলেন, লকডাউনের কারণে আমাদের কাজে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।কারণ, আমরা গত প্রায় এক বছর থেকে ওয়ার্কিং ফ্রম হোম সেট-আপে কাজ করে অভ্যস্ত। Source: Fazal Sadique
এই লকডাউন কি সাময়িক?
বলা হচ্ছে যে, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লকডাউন বজায় থাকবে। বাংলাভাষী কমিউনিটির যারা এসবিএস বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা লকডাউন উঠে যাওয়ার বিষয়ে খুবই আশাবাদী।
ফজল সাদিক বলেন,
“যদিও এই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং হঠাৎ করে লকডাউন আমাদের জীবনে অনেক অসুবিধা সৃষ্টি করবে, তারপরও, আমরা অনেক কৃতজ্ঞ যে, অনেক দেশের মানুষের থেকে এবং অনেকের থেকে, আলহামদুলিল্লাহ্, আমরা অনেক ভাল আছি। আমাদের সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। আশাকরি, খুব তাড়াতাড়ি আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো, ইনশা’আল্লাহ্।”প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেইন বলেন, কম্পিউটার অন করতেই জানতে পারলাম, সন্ধ্যা থেকে লকডাউন শুরু। জীবনের স্পন্দন যেন হঠাৎ করেই থেকে গেল। Source: Md. Zakir Hossain