বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি নীতির মূল লক্ষ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, যাকে ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকার ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে ডিজিটাল ইনক্লুসন (সকলের জন্য বৈষম্যহীন সুবিধা) কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এসব বিষয়ে এসবিএস বাংলার সাথে কথা বলেছেন কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির ডিজিটাল মিডিয়া রিসার্চ সেন্টারে পিএইচডি গবেষণারত এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মিঃ আব্দুল আজিজ।
ডিজিটাল ইনক্লুসন বলতে কি বোঝায় এ প্রসঙ্গে মিঃ আব্দুল আজিজ বলেন, "সহজ করে বললে আমাদের সমাজে যেসব নানা বৈষম্য বা এক্সক্লুশন আছে তা ডিজিটাইজেশন বা প্রযুক্তির সহায়তার মধ্যে দিয়ে এক্সক্লুশন দূর করার যে প্রক্রিয়া সেটাই ডিজিটাল ইনক্লুশন।”
“নব্বই দশকের শুরুতে যারা আইসিটি এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতেন তারা দেখলেন সমাজের মধ্যেই 'ডিজিটাল ডিভাইড' রয়েছে অর্থাৎ কারো ডিজিটাল এক্সেস (ব্যবহারের সুযোগ) আছে বা কারো নেই, ২০০৫ সালে এটি নিয়ে আরো কম্প্রিহেনসিভ ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে গবেষকরা কাজ শুরু করলেন-এভাবেই ডিজিটাল ইনক্লুশনের ধারণার শুরু।"তিনি বলেন, ডিজিটাল ইনক্লুশনের মধ্যে সমাজের নানা বৈষম্যের যে ইনডিকেটর আছে সেগুলো চিহ্নিত করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এরপর এটি আরো এগিয়ে গেলো যখন তারা চিন্তা করলেন ডিজিটাল এক্সেসই যথেষ্ট নয়, মিডিয়া স্কীল এবং লিটেরেসির ওপরও জোর দিতে হবে।
কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির পিএইচডি গবেষক আব্দুল আজিজ Source: Abdul Aziz
“তাছাড়া আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং বিগ ডাটার মধ্যে দিয়ে যে বৈষম্য তৈরী হচ্ছে তা নিয়েও ভাবতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের ইনডেক্সের মাধ্যমে প্রকাশ করে কত মানুষের ডিজিটাল এক্সেস আছে। সুতরাং বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মিঃ আজিজ তার একটি প্রবন্ধে বাংলাদেশে ডিজিটাল ইনক্লুসনের কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন, এ প্রসঙ্গে তিনি এসবিএস বাংলাকে বলেন, “আমাদের দেশে সামাজিক বৈষম্য অনেক বেশি প্রকট, এই বৈষম্য বা এক্সক্লুশন কমিয়ে আনতে ডিজিটাইজেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার আইসিটি পলিসির জন্য 'ভিশন ২০২১ থেকে ২০৪১' ঘোষণা করেছে এবং 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তুলতে নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করছে।”
“কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব কিছুর মধ্যে দিয়ে কি ডিজিটাল ইনক্লুশন নিশ্চিত হয়ে গেছে? এর উত্তর খুঁজতে দেখতে হবে ডিজিটাল ইনক্লুশনের যে তিনটি বেসিক ক্রাইটেরিয়া তা হলো আইসিটি এক্সেস (ব্যবহারের সুযোগ), ইউজ (ব্যবহার) এবং স্কীল (দক্ষতা) - এই তিনটি বিষয়কে ফোকাস করতে হবে।”
তিনি বলেন, ডিজিটাল সুবিধার মানদণ্ডে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।
“সাউথ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দাম সবচেয়ে বেশি, অথচ স্পীড কম। আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান গ্লোবালি ১৪৭, এবং এশিয়ায় ৩০তম।”
তিনি বলেন, টেলিটকের মত সরকারী প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কও এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে, এর মানে দরিদ্র-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এর থেকে তেমন কোন সুবিধা পাচ্ছে না।
“তাছাড়া শুধু সুবিধা থাকলেই হবে না, এর ব্যবহারও বাড়াতে হবে, যেমন ইউটিলিটি বিল-পেমেন্ট, সরকারী সেবা এগুলো যাতে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে মানুষ ব্যবহার করতে পারে তাও দেখতে হবে।”
মিঃ আজিজ তার গবেষণায় বাংলাদেশের আইসিটি নীতিমালা বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “আমি আমার গবেষণায় এই বিষয়টাই দেখাতে চেয়েছি যে, বাংলাদেশ সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা হচ্ছে দেশের জাতীয় তথ্য প্রযুক্তির নীতিমালায় ডিজিটাল ইনক্লুশন ফ্রেমওয়ার্ক অনুপস্থিত এবং এটা প্রধান সমস্যা।”
“আমি যে তিনটি বিষয়ের কথা বলেছি যেমন ডিজিটাল এক্সেস, ইউজ, এবং স্কীল এগুলো সমান গুরুত্ব দিয়ে আইসিটি নীতিমালা সংস্করণ করতে হবে।”
পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন
আরো দেখুন: