সনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে অগ্রগতির পরেও দীর্ঘতর এবং আরও জটিল সরবরাহ চেইনের কারণে স্থানীয় সুপারমার্কেটের পণ্যগুলির ক্ষেত্রেও আপনাকে চিন্তা করতে হতে পারে।
খাদ্য জালিয়াতির বিষয়ে নজর রাখতে আপনি কী করতে পারেন এবং কোন পণ্যগুলি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ - এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন।
জালিয়াতির নুমনা হতে পারে অনলাইনে ডিসকাউন্টে কেনা আঙ্গুরের রস মিশ্রিত কোন পুরোনো ওয়াইনের বোতল। অথবা জাফরানের নাম কিছু পণ্য, যা আদৌ প্রকৃতি থেকে পাওয়া নয়, হয়তো সস্তা, সিন্থেটিক রঙ দিয়ে তৈরী।
অথবা হয়ত স্থানীয় রেস্তোরাঁয় আপনি যে বড়ো বড়ো চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে খাচ্ছেন তা হয়তো জেলির মতো পদার্থ যোগ করে পরিবেশন করা হচ্ছে, আর এমনটিই একটি ইউ-এস-গবেষণা অনুসারে জানা যাচ্ছে।
সেনাকা রণধীরা মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য বিজ্ঞানের একজন সহযোগী অধ্যাপক।
তিনি বলেন, খাদ্য জালিয়াতির সবচেয়ে সাধারণ ধরনগুলির মধ্যে আছে ভেজাল বা উপাদানগুলো ফিকে করা; বিশ্বব্যাপী এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই সমস্যা বাড়ছে।
তিনি বলছেন, "ভেজাল দেয়া খুবই সাধারণ ঘটনা, যেমন নিম্নমানের ফলের রসে ওয়াইন পাতলা করা, বা দুধে জল দেয়া। এটি যেমন সহজ এবং তেমনি (মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য) কখনও কখনও খুব জটিল এবং মারাত্মক হতে পারে।"
২০০৮ সালে চীনে ডেইরি দুধে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি দেখাতে বিষাক্ত শিল্প রাসায়নিক মেলামাইন যোগ করা হয়েছিল; এতে ছয়টি শিশু মারা গিয়েছিল এবং আনুমানিক তিন লক্ষ মানুষ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল।
অধ্যাপক রণধীরা সাত ধরনের খাদ্য জালিয়াতি চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলি ভোক্তাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে।
ভেজাল ছাড়াও রয়েছে টেম্পারিং এবং ভুল লেবেলিং, উত্পাদন চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত উত্পাদন, চুরি, যে বাজারের জন্য পণ্য তার বাইরে নেয়া - যেমন যখন ইউএনের বিনামূল্যে বিতরণ করা খাদ্য সাহায্য বিক্রি করে দেয়া - এবং পণ্য নকল করা৷
তিনি বলেছেন সরকার, বৈধ উৎপাদক এবং ভোক্তাদের জন্য একইভাবে একুশ শতকের সাপ্লাই চেইনগুলির গতিপথ নজরে রাখা কঠিন হতে পারে - তবে স্থানীয়ভাবে কেনা সবসময়ই ভাল।
২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিজেদেরই খাদ্য জালিয়াতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য শংকা তৈরী হয়েছিল, তখন কুইন্সল্যান্ড এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রবেরিতে সেলাইয়ের সূঁচ ঢোকানো পাওয়া গেছে, সেগুলো কিছু বড় সুপারমার্কেট থেকে কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও জাতীয়ভাবে ১৮৬ টি মামলার ক্ষেত্রে এগুলো প্রতারণামূলক ছিল বলে মনে করা করা হয়, ফলে ভুক্তভোগী ব্র্যান্ডগুলি এখনও ব্যাপক সুনাম ক্ষতির সম্মুখীন।
এগ্রি ফিউচার্সের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে খাদ্য জালিয়াতির কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদকদের বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার গচ্চা গেছে, এবং শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই তারা ২ থেকে ৩ বিলিয়ন খরচ করছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত জালিয়াতির বিশাল পরিমাণ হিসাব ধরা হয়নি।
সিডনির ইউ-এন-এস-ডব্লিউ-তে ফুড মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক জুলিয়ান কক্স বলেছেন যে এমন অনেক ভোক্তারই খাদ্য জালিয়াতি সনাক্ত করতে পারার বিশেষজ্ঞ জ্ঞান নেই।
তবে তিনি বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ান খাদ্য শিল্পগুলি ক্রমবর্ধমান উন্নত, জেনেটিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহারে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বিশেষ করে মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারের মতো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে যা জালিয়াতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
মশলার মত কিছু পণ্যের জন্য এর সঠিকতা নিশ্চিত করা কঠিন, কারণ এর সরবরাহ চেইন দীর্ঘ।
২০১৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজিউমার কমিশন হোয়েটস ফুডকে ১০.৮০০ ডলার জরিমানা করেছে কারণ এর অরিগানো (এক ধরণের পুদিনা পাতা) পণ্যগুলি প্রকৃত অরিগানোরও ৫০ শতাংশের কম ছিল।
এবং ওয়াইনে ভেজাল দেয়া তো পুরোনো গল্প - এমনকি প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান উভয়েরই স্বাদ এবং রঙের ব্যবহার সম্পর্কে আইন ছিল।
খুব সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ান ওয়াইন উত্পাদক পেনফোল্ডসকে অপরাধী গোষ্ঠী লক্ষ্যবস্তু করেছে। ২০১৭ সালে চীনে নকল ওয়াইন পাওয়া গেছে যেখানে পুলিশ এমন ১৪,০০০ বোতল জব্দ করেছে। একই ঘটনা ঘটছে কম্বোডিয়াতেও।
অধ্যাপক রণধীরা বলেছেন বিলাসবহুল পণ্যগুলিরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্বব্যাপী মধু শিল্প নকলের জন্য এত কুখ্যাত হয়ে উঠেছে যে কেইন সিরাপের ভেজাল দিয়ে পাতলা করা থেকে শুরু করে নকল মানুকা তৈরী হচ্ছে। যাকে অনেকে হানি লন্ডারিংও বলা হয়।
কিন্তু প্রফেসর রণধীরা এবং প্রফেসর কক্স উভয়ই বলেছেন যে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসারে, অস্ট্রেলিয়া খাদ্য সুরক্ষার জন্য সেরা দেশগুলির মধ্যে একটি। তবে খাদ্যের উত্স সম্পর্কে কোন ইতিবাচক সংশয় সবসময়ই কাম্য।
প্রফেসর রণধীরা বারকোড এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ চেক করার জন্য যেকোনও টেম্পারিংয়ের লক্ষণ থাকলে তা আপনার স্টেটের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করার সুপারিশ করেন।
এবং প্রফেসর কক্স বলেছেন যে যদি কোন পণ্যের মূল্য অতি সস্তা মনে হয় তবে সন্দেহ করা উচিৎ।
তিনি বলেন, "সত্যিই যে কেউ, এমনকি আমার মতো একজন অধ্যাপককেও বোকা বানানো যেতে পারে। ধরা যাক, যদি দেখি হঠাৎ ওয়াগিউ গরুর মাংস ১০ ডলার কেজিতে কিনতে পারছি, তবে স্পষ্টতই এটি প্রতারণামূলক হতে পারে।"
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।