স্ক্যানলন ফাউন্ডেশনের একটি বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১৯ ম্যাপিং সোশ্যাল কোহশন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বহুসংস্কৃতির পক্ষে ৮৫ শতাংশের উপরে সমর্থন রয়েছে এবং ৯০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতারা এও বলেছেন যে তারা অস্ট্রেলিয়ায় নিজ বাসভূমির অনুভূতি বোধ করছেন।
তবে বহুসংস্কৃতিবাদ সম্পর্কে আশাবাদ সত্ত্বেও, মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। মুখোমুখি উত্তরদাতা এবং অনলাইন জরিপ থেকে একেবারে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে।
যখন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল - তাদের মধ্যে টেলিফোনে উত্তরদাতাদের ২১ থেকে ২৫ শতাংশ মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত পোষণ করে, কিন্তু অনলাইন জরিপে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ।
মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যান্ড্রু মার্কাস এই প্রতিবেদনেটি তৈরী করেছেন। টেলিফোনের মাধ্যমে ১৫০০ এবং অনলাইন জরিপে ২,০০০ জন মাইল সর্বমোট উত্তরদাতা ছিলেন ৩৫০০।
অধ্যাপক মার্কাস বলেছেন যে নির্দিষ্ট ফলাফলটি ইঙ্গিত করে যে কিছু বিষয় নিয়ে এই অন্তর্নিহিত উদ্বেগ রয়েছে যা লোকেরা সরাসরি প্রকাশ করতে নারাজ।
'আপনার চামড়ার বর্ণ, বর্ণ বা ধর্মের ভিত্তিতে আপনি কি গত ১২ মাসে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন' এই প্রশ্নে - ২০০৭ সালে প্রথম সমীক্ষার পর থেকে সাম্প্রতিক জরিপে প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুসলিম বা হিন্দু হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের হার ৪০ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মোহাম্মদ আল-খাফাজি অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন অফ এথনিক কমিউনিটিস কাউন্সিলের সিইও। তিনি বলেছেন, মুসলিমবিরোধী মনোভাব এমন একটি বিষয় যা সরকারের সমাধান করা উচিত।
২০১১ সাল থেকে সমীক্ষাটি সেই সমস্যাগুলি নির্ধারণের চেষ্টা করেছে যা সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়, খোলা প্রশ্ন ছিল: 'আজকে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি কী বলে আপনি মনে করেন?'
অর্থনীতি ও বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ ধারাবাহিকভাবে তালিকায় শীর্ষে থাকলেও, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ ছিল গত বছর থেকে এ বছরে রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। এক্ষেত্রে টেলিফোন পরিচালিত সমীক্ষায় ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ এবং অনলাইন জরিপে ৫ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণার পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করার মত।
১৮-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সর্বাধিক উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই উদ্বেগ খুব কম দেখা গেছে।
হামসা ফারাহ হলেন একজন তরুণ অস্ট্রেলিয়ান যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে আজ অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি চাপ হিসেবে দেখছেন।
২৩ বছর বয়সী ফারাহর এই বিষয়ে পেশাগত আগ্রহ আছে, তিনি পরিবেশ বিষয়ে পড়াশুনায় স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন এবং সাস্টেইনিবিলিটি এডভাইজার হিসাবে কাজ করছেন, তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিতও বোধ করেন।
মিঃ ফারাহ মনে করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগের জবাব দিতে রাজনীতিবিদদের আরও বেশি চিন্তা করা উচিত।
অধ্যাপক মার্কাস বলেছেন, অভিবাসনের অর্থনৈতিক সুবিধা প্রশ্নে জরিপটিতে বেশ ইতিবাচক ফলাফল দেখা গেছে এবং অভিবাসীরা নতুন সংস্কৃতি এবং ধারণা আনতে সহায়ক কিনা, এ প্রশ্নে ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পক্ষে কথা বলেছেন।
তবে তিনি বলেছেন অভিবাসন সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে ফলাফল কম। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৮ সালে ইমিগ্রেশন ৪৩ শতাংশ থেকে এই বছর প্রান্তিকভাবে হ্রাস পেয়ে ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ইমিগ্রেশন সংখ্যা সঠিক বা খুব কম এই প্রশ্নে উত্তর ৫৩ শতাংশেই রয়ে গেছে।
মাল্টিকালচারাল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং এসবিএসের চেয়ারম্যান হাস দেলাল বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে আরও ভালোভাবে অবহিত হয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তারা সুখী কিনা এর উত্তরে ৮৮ শতাংশ বলেছেন তারা গত বছরের তুলনায় খুব সুখী, তবে সমীক্ষা শুরুর পর থেকে হতাশার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে তরুণরা সর্বোচ্চ হারে হতাশ, ২০০৭ সাল থেকে যা ১০ শতাংশ বেড়েছে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন