বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ফিউশন বিক্রিয়ায় যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন করেছেন।
সূর্যকে শক্তি দেয় এমন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে কয়েক দশকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটি একটি বড় অগ্রগতি।
ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষকরা এটিকে প্রকৃত জ্বালানী তৈরীর এক যুগান্তকারী অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।
মিশিগান ইউনিভার্সিটির ক্যারোলিন কুরাঞ্জ বলেছেন, নেট এনার্জি অর্জনের জন্য বিজ্ঞানীরা চুম্বকের পরিবর্তে লেজার ব্যবহার করেছেন।
ফিউশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন পরমাণু একে অপরের মধ্যে এমন শক্তি দিয়ে চাপ দিয়ে কাজ করে যার ফলে হিলিয়ামে একীভূত হয়, এতে প্রচুর পরিমাণে শক্তি এবং তাপ উৎপন্ন হয়।
অন্যান্য পারমাণবিক বিক্রিয়া থেকে এটি ভিন্ন, এতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয় না।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জেরেমি চিটেনডেন বলেন, যদিও এই অগ্রগতি তাৎপর্যপূর্ণ, তবে আমরা একটি কার্যকর শক্তির উৎস হিসেবে ফিউশন ব্যবহার থেকে অনেক দূরে আছি।
কিন্তু এটা ঠিক যে বিজ্ঞানীরা তাদের ব্যবহারের চেয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন, এবং এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
কিন্তু সবাই পারমাণবিক ফিউশনের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত নয়।
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস-এর ড. মার্ক ডিজেনডর্ফ বলেছেন, ফিউশন প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে উত্সাহিত করা প্রতিরোধ করতে আইনের অভাব রয়েছে।
তিনি বলছেন, যে ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষার অগ্রগতি হয়েছে সেটিকে তার একজন প্রাক্তন সহকর্মী 'বোমা কারখানা' বলে বর্ণনা করেছেন।
ড. ডিজেনডর্ফ বলছেন, "যেকোন ধরনের নিউক্লিয়ার ফিউশন অনিরাপদ কারণ এটি প্রচুর পরিমাণে নিউট্রন তৈরি করে। এবং এই নিউট্রনগুলিকে স্ট্রাটেজিক নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে।"
"তাই এগুলি মূলত পারমাণবিক বিস্ফোরক, যেমন প্লুটোনিয়াম ২৩৯, বা ইউরেনিয়াম ২৩৫, বা ইউরেনিয়াম ২৩৩। সুতরাং এটিই হচ্ছে প্রথম সমস্যা - এই প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরক তৈরি হতে পারে।"
"এবং দ্বিতীয় সমস্যাটি হল, যে নিউট্রনগুলি ট্রিটিয়াম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়, তা ভারী হাইড্রোজেনের একটি রূপ। এবং এটি ব্যবহার করা হয় সাধারণত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীতে।"
তিনি বলেন যে অনেক দেশের সরকার তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতার পরিপূরক হিসেবে ফিউশন ব্যবহার করে।
তিনি বলছেন, নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে অস্ত্র তৈরী করে এমন একটি গ্রুপ ইউএস ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটি হচ্ছে লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির অংশ, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং অস্ত্র গবেষণা শিল্পে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
ড. ডিজেনডর্ফ আরও বলেন, নিউক্লিয়ার ফিউশন জ্বালানীর পুরো সুবিধা পেতে যে সময় লাগবে, তার মধ্যেই পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে সৌর এবং বায়ু শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।
কারণ নিউক্লিয়ার ফিউশন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে সৌর শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক সাশ্রয়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে টেকসই নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তি থেকে জ্বালানী বা বিদ্যুৎ শক্তি পেতে আরো কয়েক দশক লেগে যেতে পারে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার